৫৬০ কোটি টাকা নিয়েও বিআরটিএর ট্র্যাকিং সিস্টেম সেবা প্রশ্নবিদ্ধ

Passenger Voice    |    ১১:১৭ এএম, ২০২০-০৩-১২


৫৬০ কোটি টাকা নিয়েও বিআরটিএর ট্র্যাকিং সিস্টেম সেবা প্রশ্নবিদ্ধ

জাহাঙ্গীর আলম বাবু : ২০১২ সালে যখন ডিজিটাল নম্বর প্লেট দেওয়া শুরু করে তখন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) প্রতিশ্রুতি দেয় যে, ডিজিটাল নম্বর প্লেট সম্বলিত গাড়ি চুরি হয়ে গেলে গাড়িটি ট্র্যাক করা যাবে এবং অপরাধমূলক কাজে গাড়িটি ব্যবহার করা হয়েছে কী না, সেটি শনাক্ত করা যাবে। তাই সব ধরণের গাড়ীর জন্য ডিজিটাল নম্বর প্লেট বাধ্যতামূলক করা হয়। এই রেট্টো-রিফ্লেক্টিভ নাম্বারপ্লেট ও রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগের জন্য মোটর সাইকেল ও থ্রী-হুইলারের জন্য ২ হাজার ২৬০ টাকা ও চার চাকার পরিবহনের জন্য ৪ হাজার ৬২৮ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়। 

বিআরটিএ সদর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত চার বছরে বিআরটিএ ১৬ লাখ ১২ হাজার ডিজিটাল নাম্বার প্লেট ও ট্যাগ সরবরাহ করে ৫৬০ কোটি টাকা আদায় করেছে। কিন্তু ডিজিটাল নম্বর প্লেট দিয়ে যেসব সুবিধার কথা বলা হয়েছিল, সেটি গাড়ির মালিকরা পায়নি বললেই চলে। কারণ ডিজিটাল নম্বর প্লেটের ট্যাগ শনাক্ত করতে পারে, এমন চেক পোস্ট রয়েছে মাত্র ১২টি, যার সবগুলোই ঢাকায়। দেশের বানিজ্যিকর রাজধানী চট্টগ্রামসহ দেশের অন্য কোন জেলায় এই চেকপোস্ট নেই। এমনকি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য বিআরটিএ কাউকেই নিয়োগ দেয়নি।

তবে গ্রাহকদের অভিযোগ রয়েছে, গাড়ীর ডিজিটাল নম্বর প্লেট না লাগালে ফিটনেস নবায়ন করা হয়না। যার ফলে বাধ্য হয়ে ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগাতে হয়। এই শাখার দায়িত্বে থাকা কিছু অসাধু কর্মকর্তারা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নানার হয়রানীর করে থাকে। এবং ঘুষ লেনদেন করার বিষয়েও অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম বিআরটিএতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট সংযোজন করতে আসা চট্টগ্রাম থ-১৪-৩৪৯৩ ও চট্টগ্রাম থ-১৩-৭২০৮ নং গাড়ীর চালকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, তারা প্রথমে ডিজিটাল নম্বর শাখায় যায়, সেখান থেকে জানানো হয় চট্টগ্রাম জেলা রেজিষ্টেশন নেওয়া সিএনজি গুলোতে নাকি সামনের অংশে হলুদ রং লাগাতে হবে। পরে অনেক কথা বার্তার মাধ্যমে ৫০০ টাকা করে অফিস খরচ (ঘুষ) দিয়ে লাগিয়েছে।

বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এই শাখায় মিনহাজসহ ২/৩ জন গ্যাটিস রয়েছে, তাদের সমন্বয়ে এই কাজগুলো হয়ে থাকে। তারা অনেকদিন ধরে বিআরটিএতে থাকার কারনে গাড়ীর খুটিনাটি বিষয়গুলো জেনে গেছে। এখন তারা এইসব দুর্বলতা নিয়ে মালিকদের জিম্মি করে টাকা আদায় করে। লোকমূখে অভিযোগ রয়েছে যে, এই শাখার কাজ হচ্ছে শুধু ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগানো। কিন্তু তারা ফিটনেস শাখার মোটরযান পরিদর্শকের মতো গাড়িটি পরিদর্শন করে থাকে। এবং কোন গাড়ীর (পিকআপ-ট্রাক) চাকার সাইজ বা অতিরিক্ত বডি সংযোজন করা থাকলে সেই গাড়ী গুলো থেকে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে থাকে। কোন মোটর সাইকেলের মালিক মূল মানি রিচিভ হারিয়ে পেললে তাকে বিভিন্ন হয়রানী করা হয়, পরে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় সেটা লাগিয়ে থাকে তারা। এছাড়া কোন গাড়ীর চ্যাসিস নং সম্পূর্ণ বুঝা না গেলে সেই সকল গাড়ী গুলোকে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত ঘুষ হিসেবে দিতে হয়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘‘মানুষকে ফি দিতে বাধ্য করে সেবা না দেওয়াটা অন্যায়। বিআরটিএ’র উচিত আরএফআইডি শনাক্তকরণ যন্ত্র বাড়ানো এবং এগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য দক্ষ লোকবল নিয়োগ দেওয়া।’’

বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান কামরুল আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে মানুষ আশানুরূপ সেবা না পাওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘মহাসড়কে আরও চেক পোস্ট স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তহবিল ঘাটতির কারণে সেই পরিকল্পনা আর আলোর মুখ দেখতে পায়নি।’’ ‘‘এখন আমরা পরিকল্পনাটি পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছি। 

২০১২ সালে ডিজিটাল এই প্লেট ও ট্যাগ তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। বিএমটিএফ-কে প্রথম ৫ বছরের জন্য প্রায় ৫৬০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বিআরটিএ। এছাড়া পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য আরও ৬০০ কোটি টাকা পরিশোধের কথা রয়েছে। তবে কতগুলো ডিজিটাল প্লেট লাগছে তার ওপর নির্ভর করে টাকার পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।

শুধু স্টিলের শিটে ডিজিটাল নম্বর খোদাই এবং গাড়ির গ্লাসে আরএফআইডি স্টিকার লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে বিআরটিএ। অথচ আনুসাঙ্গিক প্রযুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি এখনও। অসন্তুষ্ট গাড়ি মালিকদের অভিযোগ, এই প্রযুক্তি থেকে টাকা ও সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা, জবাবদিহিতা এবং দক্ষ জনবল না থাকায় প্রকল্পটি সফলতার মুখ দেখেনি।